Posts

পার্বতীর পারে ২

নৈশাহারের বিরতি শেষ। অর্চিষ্মান মুঠোভরা মৌরি মুখে ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাসে উঠল। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইসাব গুনতি সেরে বাস চালু করার সংকেত দিয়ে ড্রাইভারের কেবিনের পর্দা টেনে দিলেন। বাসের আলো নিভে গেছে। অর্চিষ্মান কানে গান গুঁজে চোখ বুজে হেডরেস্টে মাথা হেলিয়েছে। সামনের রো-এর বেটার এনার্জি অবশেষে ফুরিয়েছে। চারদিক চুপচাপ। খালি ড্রাইভারের কেবিনের কেউ দেড় মিনিট অন্তর সশব্দে কফ তুলে ফেলছেন। হোপফুলি জানালার বাইরে। আমাদের সিটের কোণাকুণি সিটে একটা ছেলে ফোন ঘাঁটছে। চরাচরে ওই একটিমাত্র আলোর আয়তক্ষেত্র। সবকিছু থেকে মন সরিয়ে জানালার বাইরে স্থাপন করলাম। এ প্রাণ রাতের ভলভো। রাস্তার ধারের অন্ধকারে কখনওসখনও দোতলার জানালায় একলা আলো। পরীক্ষার পড়া? ইনসমনিয়া? প্রেমের শুরু? প্রেমের শেষ? রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা শূন্যে ঠেকেছে, মিছিল করে চলেছে শুধু প্রকাণ্ড পাঞ্জাব লরির দল - মধ্যরাতের হাইওয়ের রিয়েল মাফিয়া। সে মিছিলের ফাঁক গলে গলে লং ড্রাইভের পাহাড়মুখো বাস। পুরুষকণ্ঠ। ড্রাইভারজি ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। সাক্ষাতে আর ফোনে কথা বলার টোনে কত তফাৎ। এত রাতে কে জেগে আছে ওঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য? নির্ঘাৎ অন্য কোনও ভলভোর

পার্বতীর পারে ১

অন্যদিন দু’বার বাজায়, বৃহস্পতিবার অর্চিষ্মান চারবার বেল বাজাল। গুডফ্রাইড ইভে আসন্ন লং উইকেন্ডের উত্তেজনায় নির্ঘাত। এ জুতোর ডগা দিয়ে ও জুতোর গোড়ালিতে চাপ দিতে দিতে বলল, প্রসেনজিৎ চলে গেছে? বললাম, তিরিশ সেকেন্ড আগে এসেছে। লুচি করতে বলবে? লুচি আর সাদা আলুর তরকারি? মানে তোমার যদি অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে না করে? ময়দা আছে কি না-র সাড়ে তিনমিনিটের প্যানিক পেরিয়ে ঘরে এলাম। অর্চিষ্মান নাকের ডগায় ফোন ধরে খাটে চিৎপাত। রোজই চিৎপাত হয় কিন্তু আজকের ভঙ্গিটা সামান্য আলাদা। অন্যদিনের ‘তুলে নে মা’-র বদলে আজ চোখেমুখে শিকারী বাজের তৎপরতা। অর্চিষ্মান নেক্সট তিনদিনের মজা খুঁজছে। প্রসেনজিৎ কোস্টার খুঁজে এনে চায়ের কাপ নামিয়ে রান্নাঘরে ফিরে গেল। অর্চিষ্মান জিয়োহ্‌ বলে শূন্যে মুঠি ছুঁড়ল। অতি উত্তম এসে গেছে নেহরু প্লেসে। ছ’বেলার একবেলা সর্টেড। আরেকবেলা ওই দোকানটায় খাব, আরে ওই যে ওই দোকানটায় অনেকদিন ধরে যাব যাব করছি, আহা বল না, ওই যে ব্যাম্বু না গার্ডেন, আমি বললাম মেনল্যান্ড চায়না, তখন বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মেনল্যান্ড চায়নাতে খেতে যাব, তুমি কুংফু পান্ডা ফোর-এর কথা বলছিলে সেটাও যাওয়া যায় আরেকবেলা, আরেকবেলা জামা মসজ

আনরিলেটেবল অতীতচারণা। Happening by Annie Erneux। Scenes from a Childhood by Jon Fosse।

বন্ধু বলল, ফেসবুকের অমুক কবির কবিতা পড়েছিস? স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বানান না জানলেও আমরা সবাই যেমন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচেই থাকি তেমনি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও (এবং ফেক থেকে আড়ি পাতায় বহুদিন ক্ষান্ত দিলেও, অন গড ফাদার মাদার) আমরা সবাই আসলে ফেসবুকেই আছি। কাজেই ভদ্রলোকের কবিতা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। বা, না পড়ে থাকার সুযোগ হয়নি। লোকে হোয়াটস্‌অ্যাপ বায়োতে সেঁটেছে। মাদার্স ডে আর ছটপুজোয় লাগসই লাইন তুলে ফরওয়ার্ড করেছে। তাদের কিছু কিছু আমিও রি-ফরওয়ার্ড করেছি। স্বীকার করলাম। পড়েছি রে।  বিশ্বস্ত লোকজনকে ফরওয়ার্ডও করেছি। হাসির চোটে চোখ থেকে নীল অশ্রু ছিটকে বেরোনো ইমোজি সহযোগে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ভালো অভিনেতা/ পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও (ইটালিকসের অংশটা তিনি বলেননি, পরের বাক্যের সঙ্গে সাযুজ্যরক্ষার্থে আমি জুড়েছি) উনি দর্শক হিসেবে জটিল নন। ওঁর সবই ভালো লাগে। আমার আবার ঠিক উল্টো। স্রষ্টা হিসেবে যেমনই হই না কেন ভোক্তা হিসেবে নিক্তি হাতে বসে আছি। মাপ মনের মতো না হলেই নাক কুঁচকে বাতিল করব। বন্ধুর ভঙ্গিতে কবির কবিতা সম্পর্কে আসন্ন অ্যাপ্রিসিয়েশনের আঁচ পেয়ে আগেভাগে নিজে

নভেম্বর (২)

Image
বাবা বললেন, জগদ্ধাত্রী পুজোতে আসিসনি অনেকদিন। নাকতলার মামার পঁচাত্তর বছরের জন্মদিন উদযাপনের দিনও ছিল কাছাকাছি। দুটো মিলিয়ে বাড়ি যাওয়া হল। দুটোতেই ভালো জামাকাপড় পরার ব্যাপার আছে। আজকাল সাজের দিকে মন গেছে খুব। সাজ অর্থে টিপ। কুর্তা শাড়ি জিনস, বাকি শরীরে যাই থাকুক, কপালে একখানি টিপ ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোই না। একটি নির্দিষ্ট রঙের, নির্দিষ্ট সাইজের টিপ। মা যেটা পরতেন। মায়ের মেয়ে হতে পারিনি। পারব না। আয়নায় আচমকা চোখ পড়ে গেলে যদি এক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে বোকা বানাতে পারি সেই আশায় টিপ পরা। টিপসর্বস্ব সাজের সুবিধে হচ্ছে ব্যাপারটা সরল ও সস্তা। সাজগোজের দাম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একবার বিপদে পড়েছিলাম। কসৌলি গেছিলাম। ফেরার পর অফিসে ফলাও করতে সহকর্মী হাহাকার করলেন। আগে বললে না? কসৌলিতে নাকি কসমেটিকসের কুটিরশিল্পের রমরমা। ওঁর কোন বন্ধু গিয়েছিল, গোটা মাসের মর্নিং অ্যান্ড নাইট বিউটি রুটিনের মালমশলা চারশো টাকায় কিনে এনেছে। যেটা দিল্লিতে এনি ডে চার হাজার। যখনকার কথা তখন চুল কাটার সময় ঘনালে অর্চিষ্মানকে ধরি। তোমার নাপিত আমার চুল কেটে দিতে পারবে না? স্ট্রেট কাঁচি চালিয়ে দেওয়া তো। অর্চিষ্মান হিংসুটেমো

আজকের জন্য

Image
 

নভেম্বর

আমাদের ওদিকে চিরকালই হিংসার ঐতিহ্য জ্বলজ্বলে। রিষড়ার জাগ্রততম ভগবান সিদ্ধেশ্বরী কালীঠাকুর, যার থানে নিয়মিত মুণ্ডু কাটা পড়ত। রিষড়ার বিখ্যাততম বাসিন্দা রঘু ডাকাত। ব্রাত্য বসুর সিনেমা 'হুব্বা' মুক্তি পেয়েছে, এবার রঘুবাবুর জনপ্রিয়তা কমতে পারে। হুব্বা শ্যামলও, এখনও যদি কেউ না জেনে থাকেন, আমাদের পাড়ার লোক। শ্বশুরবাড়ির পাড়ার গুণ্ডার সিনেমা দেখার জন্য অর্চিষ্মান পাগল হয়ে উঠেছে। এদিকে 'হুব্বা' দিল্লিতে এখনও রিলিজ করেনি, করবে কি না বোঝা যাচ্ছে না। ওয়ার্স্ট কেসে হইচইতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার দেখতে হবে। যেখানেই দেখি না কেন অবান্তরে প্রতিক্রিয়া দেব। উইথ ব্যক্তিগত অ্যানেকডোট। যার খোঁজ ব্রাত্য বসুর রিসার্চারদের পক্ষে পাওয়া অসম্ভব। রঘু, হুব্বা দুজনেই গত হয়েছেন, পাড়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নতুন সিন্ডিকেট। দাপটের আঁচ পেলাম বাড়ি গিয়ে। আমার আর মায়ের শোয়ার ঘরের সিলিং ফ্যানের পাশেই একটা এস-হুক থেকে ঝুলছে মায়ের পুরোনো শাড়ি দিয়ে বানানো প্রকাণ্ড পুঁটলি। আগের বছর তিনটে পাকা কাঁঠাল চুরি হয়ে যাওয়ার শোক বাবা কাটাতে পারেননি। এ বছর কলার একটা কাঁদি মোটামুটি কাঁচকলা স্টেজে যাওয়া মাত্র কেটে এনে ঘরের ভেতর সিলিং