বিহার নিবাস, দ্য পটবেলি





লালু ভালো নীতিশ খারাপ। মৈথিলী ভাষায় অইখন মানে এখানে তইখন মানে সেখানে। ভোজপুরী ফিল্মি গানের ভাষা এমন যে ফ্যামিলিকা সাথ বইঠকে শোনা যায় না। অথচ সেই গান শুনে শুনে মৈথিলী যুবসম্প্রদায় গোল্লায় যাচ্ছে। এ সব খবর আমরা পেলাম ঈদের দুপুরে বাড়ি থেকে বিহার নিবাস যেতে যেতে। 

ট্যাক্সিতে উঠেই যেই না বললাম বিহার নিবাস যানা হ্যায়, ভদ্রলোক এক গাল হেসে জি পি এস বন্ধ করে দিলেন। ট্যাক্সিচালকরা দু’প্রকার। একদল জি পি এস-এর দেখানো রাস্তার এক ইঞ্চি এদিকওদিক দিয়ে যেতে রাজি হন না। আর একদল জি পি এস-এর সাহায্য নেওয়াকে কাপুরুষতা মনে করেন। প্রথমে ভেবেছিলাম এই ভদ্রলোক দ্বিতীয় দলের। তারপর অন্য কারণটা বেরোলো। নার্ভাস হয়ে আমরা কিন্তু রাস্তা চিনি না বলাতে আশ্বাসের হাত তুলে বললেন, আপনা হি স্টেট হ্যায়, ভবন তো পাতা হি হোনা চাহিয়ে।

কৌটিল্য মার্গের বিহার ভবন ওঁর পাতা ছিল ঠিকই কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ক্যান্টিনটা তেনজিং নোরগে মার্গের বিহার নিবাসে। দুটোর মধ্যে দূরত্ব মোটে পাঁচ মিনিট।

বিহার নিবাসের ক্যান্টিনকে অবশ্য ক্যান্টিন বলা উচিত নয়। কারণ সেটা একটা বাহারি দোকান। শাহপুর জাট ভিলেজে পটবেলি রুফটপ ক্যাফের ধুন্ধুমার ব্যবসা দেখে বিহার ভবন/নিবাসের কর্তারাই পটবেলি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন বিহার নিবাসে তাঁদের দোকান খুলতে। সিদ্ধান্ত যে ভুল হয়নি তা মঙ্গলবারের (অবশ্য ছুটির মঙ্গলবার) দুপুরের হাউসফুল দিয়েই পরিষ্কার। 

শাহপুর জাটের চারতলা বাইতে যাঁদের হাঁটু কাঁপে, কিংবা হিপস্টারদের যাঁরা ভয় পান তাঁদের পক্ষে বিহার নিবাসের পটবেলি আদর্শ। ঝলমলে, অতিথিবৎসল আবহাওয়া। কাউন্টারে যিনি বসেছিলেন আর যিনি ঘুরে ঘুরে তদারকি করছিলেন, দু’জনকেই শাহপুর জাটের ক্যাফেতে দেখেছি।

পটবেলির মেনুতে স্টার্টারের নামগুলো পড়লেই অর্ডার করতে ইচ্ছে করে। আলু লালু চপ, কিমা গোলি, পোঠিয়া মছলি ফ্রাই। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ওগুলো খেলে আর কিছু খাওয়া যায় না। তাই সোজা মেন কোর্স। আমার জন্য চিকেন তিখা ইস্টু, অর্চিষ্মানের জন্য খড়া মসালা মাটন। প্রথমটা ভাত আর দ্বিতীয়টা পরোটার সঙ্গে আসে। আর গলা ভেজানোর জন্য নেওয়া হল সল্টি অ্যান্ড স্পাইসি লস্যি। 


খড়া মসালা মানে গোটা মশলা। এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, জিরে, ধনে, গোলমরিচ, জয়িত্রী, জায়ফল - কেউ কেউ গন্ধের জন্য মৌরিও দেন - তেলে ফোড়ন (গোটা কিংবা মোটা করে গুঁড়িয়ে) দিয়ে মাংস রান্না করাই হচ্ছে খড়া মসালা মাটনের মোদ্দা রেসিপি। এত তরিবত করে রাঁধলে তো রান্না খারাপ হওয়ার কোনও কারণ নেই, খড়া মসালা মাটন প্রত্যাশিতভাবেই ভালো। কিন্তু আমাকে রুদ্ধবাক করল চিকেন তিখা স্টু। গাজর আর আলুর টুকরো দিয়ে রান্না ঝাল ঝাল, টক টক মুরগির পাতলা ঝোল। জিভে ছোঁয়ানোমাত্র মাথা থেকে পা পর্যন্ত যত ঘুমন্ত কোষ, ঝিমন্ত রন্ধ্র ঝাঁকুনি খেয়ে বাপ বাপ বলে উঠে দাঁড়ায়, দু’হাত তুলে গলা খুলে “জিয়া হো বিহার কে লালা” রাঁধুনিবন্দন শুরু করে। 


বাইরে ছাতার তলায় লিট্টি উৎপাদনশালা। খোলা আগুনের ওপর লোহার জালির ওপর বড় সাইজের সবেদার মতো সারি সারি লিট্টি। হাতের তেলো দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চারপাশ সমান করে সেঁকা চলছে। 

কাচের দেওয়াল ভেদ করে এমন মিষ্টি আলো আসছিল যে আমরা ভাবলাম আরেকটু বসা যাক। সঙ্গ দিতে এল পাইনঅ্যাপেল আপসাইড ডাউন কেক উইথ আইসক্রিম। অথেনটিক না হতে পারে, চমৎকার। আনারসের চোখওয়ালা টুকরো ঢাকা নরম মসৃণ স্পঞ্জকেক। পাইনঅ্যাপেলের উপস্থিতি প্রমাণের তাগিদে কোনও রকম সেন্টের ব্যবহার করা হয়নি। আমার মতো গন্ধবিচারীদের পক্ষে রক্ষে। 


শেষে ভালো খাওয়া উদযাপন করতে এক কেটলি চা। আদালবঙ্গএলাচ দিয়ে বেশ করে ফোটানো।

দিল্লিবাসী হলে আর স্টেট ক্যান্টিনে খাওয়ার আগ্রহ থাকলে বিহার নিবাসের দ্য পটবেলি-কে লিস্টের ওপরদিকে রাখুন। আর যাঁরা দিল্লিতে কিংবা বিহারে থাকেন না তাঁরা শিগগিরি বাড়ির কাছে বিহারী দোকান খুঁজে খেতে যান।




Comments

  1. বাহ, শেষ পাতে লালুবাবুর হ্যারিকেনও ঝোলানো আছে দেখছি। অর্চিষ্মান দাদার থালায় ওটা কি রায়তা জাতীয় কিছু (বোঁদে দেখছি যেন)? আর চায়ের কেটলির সাথে সবুজ রঙের বোতলটা কি সেই লোহার তার দিয়ে স্টপার ফিট করা জলের বোতল?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সবক'টা আন্দাজই ঠিক, আবির।

      Delete
  2. Nah ... shotti ebaar Delhi te giye thakte hobe ... at least ek bochor, eyi shob bhavan gulor bhalo bhalo khabar khete. Litti chokha khawar khub icche kintu ekhane pawa jayena.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পরেরবার কলকাতা গেলে ট্রাই কোরো, শর্মিলা, কলকাতায় নির্ঘাত লিট্টি পাওয়া যায়।

      Delete
  3. Ish tomar ei lekhagulo pore darun lobh hoy jano..

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে নিউ ইয়র্কের ফুড সিন দিল্লির থেকে অনেক বেটার, চুপকথা। খুঁজলে দেখো বিহারী খাবারও বেরোবে।

      Delete
    2. Nah ekhane anek desher khabar paoya jay kintu Indian regional cuisine seriouslu lacking.

      Delete
  4. Tomar restaurant review gulo porle amar Dilli-baasi hote icche kore. Ki jaataa sob durdanto jayegaye khete jao. Kolkata te kono Bihari restaurant ache bole to mone hoy na. Akta ache Baati Chokha bole, but seta mainly UP ba Varanasi special cuisine er jonno. Strictly veg. :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাটি চোখার তো রেটিং হাই দেখছি। একবার অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে যেতে পারো।

      Delete
  5. Onekdin restaurant e khaina.. Egulo porar jonno wait kore thaki.. Khub bhalo... Abantor porar o ekta boro gap pore geche.. Karon ta bole dicchi.. Amar ek khan chhele hoyeche.. 12 Sept.. Abantor er theke 3 din choti :) ) tomar beranor golpo ar restaurant review kintu regular likho.. Inspired hocchi abar...

    ReplyDelete
    Replies
    1. কনগ্র্যাচুলেশনস, ঊর্মি! খুব ভালো খবর। দারুণ খবর।

      Delete

Post a Comment