বর্ণনা দিয়ে যায় চেনা?



"ফেলুদা বলে, ‘নতুন চরিত্র যখন আসবে, তখন গোড়াতেই তার একটা মোটামুটি বর্ণনা দিয়ে দিবি। তুই না দিলে পাঠক নিজেই একটা চেহারা কল্পনা করে নেবে; তারপর হয়তো দেখবে যে তোর বর্ণনার সঙ্গে তার কল্পনার অনেক তফাত। তাই বলছি, ঘরে যিনি ঢুকলেন তাঁর রং ফর্সা, হাইট আন্দাজ পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চি, বয়স পঞ্চাশ-টঞ্চাশ, কানের দু’পাশের চুল পাকা, থুতনির মাঝখানে একটা আঁচিল, পরনে ছাই রঙের সাফারি স্যুট। ঘরে ঢুকে যেভাবে গলা খাঁকরালেন তাতে একটা ইতস্তত ভাব ফুটে ওঠে, আর খাঁকরানির সময় ডান হাতটা মুখের কাছে উঠে আসাতে মনে হল ভদ্রলোক একটু সাহেবীভাবাপন্ন।"

বলুন দেখি কোন গল্প, সাহেবীভাবাপন্ন লোকটার নাম কী, লোকটার বড় ছেলে কোন দেশে চাকরি করে ইত্যাদি খেলা দিয়ে পোষ্ট শুরু করতে পারতাম, কিন্তু করলাম না। কারণ আমার মুড নেই। কারণ এই প্রথম আমি একটা ভয়ানক ডিপ্রেসিং সত্যি উপলব্ধি করেছি। সত্যিটা হল যে হয়তো ফেলুদার সঙ্গে আমার সব মত মেলে না। কোনও কোনও সময় অমতও হয়। শূন্যে মুঠি ছোঁড়া পা ঠোকা গলার শির ফোলানো অমত নয়। অপরপক্ষের মত পুরোটা হ্যাঁ হুঁ করে শুনে, তারপর চেপে ধরলে, ‘হ্যাঁ, তাই হবে নিশ্চয়’ বলে পার পাওয়া অমত। 

চরিত্রের আমদানির সঙ্গে সঙ্গে চেহারার বর্ণনা দেওয়ার ব্যাপারটাই ধরা যাক। আমার আপত্তি বর্ণনা নিয়ে নয়। লেখক যার খুশি বর্ণনা দেবেন, যত খুশি দেবেন, যেমন খুশি দেবেন। বর্ণনা দেওয়া লেখকের জন্মগত অধিকার। আমার আপত্তি ফেলুদার বক্তব্যের প্রচ্ছন্ন অনুমানটা নিয়ে। যেটা হচ্ছে কি না, লেখক চরিত্রের যে বর্ণনা দেবেন, তা পাঠককে সাহায্য করবে। এর পর থেকে গোটা গল্পে পাঠক যখনই ওই নির্দিষ্ট চরিত্রটির মুখোমুখি হবেন, লেখকের আঁকা ছবিটাই তাঁর মগজে ভেসে উঠবে।

আমার ওঠে না। গল্প পড়ার সময় আমার মগজে চরিত্রদের সেই ছবিটাই ভেসে ওঠে যেটা আমি নিজে কল্পনা করেছি। অফ কোর্স, কল্পনা তো একেবারে হাওয়ায় করা যায় না। একটা ভিত লাগেই। সেই ভিতগুলো আমার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই কী কী দিয়ে তৈরি হয় সেটা আমি ভেবে ভেবে বার করেছি। 

১। ছবিঃ বইতে যদি চরিত্রের ছবি আঁকা থাকে তাহলে কল্পনার ওপর চাপ প্রায় পড়েই না। অফ কোর্স, সে সব ছবিকে ভালো হতে হবে। পত্রিকার ছোটগল্পেও পাতায় পাতায় ছবি আঁকা থাকে, তাতে কিছু যায় আসে না। (সবথেকে হাস্যকর ব্যাপার, গোটা গল্পে যদি আধখানা চুমু খাওয়ার সিন থাকে, সিনেরও দরকার নেই, উপক্রম হলেই যথেষ্ট, পাতা জুড়ে সেই সিনখানা আঁকা থাকবে, এদিকে গল্প হয়তো দেখুন গিয়ে অনাথাশ্রমে বাচ্চাদের দুর্গতি নিয়ে) কিন্তু পরশুরামের ছোটগল্পের কথা মনে করুন। পরশুরাম যে তাঁর কলম দিয়েই চমৎকার চরিত্র আঁকতে পারেন সেটা আমার বলার দরকার নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন। (“বইখানি চরিত্র চিত্রশালা।…আমি দেখিলাম তিনি মূর্ত্তির পর মূর্ত্তি গড়িয়া তুলিয়াছেন। এমন করিয়া গড়িয়াছেন যে, মনে হইল ইহাদিগকে চিরকাল জানি। এমন কি, তাঁর ভূষণ্ডীর মাঠের  ভূতপ্রেতগুলোর ঠিকানা যেন আমার বরাবরকার জানা; এমন কি যে পাঁঠাটা কন্সর্টওয়ালার ঢাকের চামড়া ও তাহার দশটাকার নোটগুলো চিবাইয়া খাইয়াছে সেটাকে আমারই বাগানের বস্‌রাই গোলাপ গাছ কাঁটাসুদ্ধ খাইতে দেখিয়াছি বলিয়া স্পষ্ট মনে পড়িতেছে।”) কিন্তু তাঁর যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন শ্রী যতীন্দ্রকুমার সেন। ওসব ছবি যে একবার দেখেছে তার আর ভোলার উপায় নেই। লেডি ডাক্তার বিপুলা মল্লিক, লালিমা পাল (পুং), লম্বকর্ণ। বিশেষ করে লম্বকর্ণ। চারপেয়ে এবং দু'পেয়ে ছাগল আমি লক্ষলক্ষ দেখেছি, কিন্তু লম্বকর্ণকে তাদের কারও সঙ্গেই গোলানো অসম্ভব।

আমার কল্পনার ফেলুদাও ছবি থেকে ধার নেওয়া। সৌমিত্র নন, শশী কাপুর নন, সব্যসাচীও নন (যদিও আমার ধারণা সাতাশ বছর বয়সে ফেলুদার রোল পেলে উনিই আমার মাথায় ফেলুদা হয়ে জেঁকে বসতেন), আমার কল্পনার ফেলুদা শিল্পী সত্যজিতের স্কেচের ফেলুদা।

বইয়ের ছবি কতটা এফেক্টিভ হতে পারে সেটা বোঝা যায় যখন সেই ছবি বইয়ের চরিত্র ছাপিয়ে বাস্তবকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। এরকম আমার যে কতবার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই, যে কেউ একজন আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাতপা নেড়ে কথা বলছে, আর আমি দেখছি আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাতপা নেড়ে কথা বলছে হাসিহাসি মুখের টাকমাথা নেড়া।

২। সিনেমা/টিভিঃ অমন দু’খানা জাঁদরেল সিনেমা থাকতেও সিনেমার ফেলুদা আমার কল্পনার ফেলুদা হতে পারলেন না, এদিকে বাজি মেরে বেরিয়ে গেলেন সোনার কেল্লার তোপসে। সোনার কেল্লা দেখার আগে আমি তোপসে বলতে কার চেহারা ভাবতাম ভুলে গেছি, মোস্ট প্রব্যাবলি, একটা ভাসা ভাসা অবয়ব থাকত, যেটা অধিকাংশ চরিত্রের ক্ষেত্রেই থাকে। সোনার কেল্লা দেখার পর থেকে আর কোথাও কোনও ভাসা ভাসা, ধোঁয়াশা, কুয়াশা নেই। ব্যোমকেশের চেহারা আমার মাথায় অনেকটা রজিত কাপুরের সঙ্গে মেলে, বাংলা বলা রজিত কাপুর। আর আমার হারক্যুল পোয়্যারো সম্পূর্ণভাবে ডেভিড সুশে। 

অফ কোর্স, এই শ্রেণীতে জটায়ুর থেকে বেটার উদাহরণ পাওয়া মুশকিল। কিন্তু তিনি এক নম্বর পয়েন্টেরও অন্যতম উদাহরণ। তাই আমি কোথাওই তাঁর নাম নিলাম না। 

৩। ব্যক্তিগত পরিচিতিঃ কোনও চরিত্রের রকমসকম হাবভাব পড়ে আমার চেনা (বা জানা) কারও না কারও কথা মনে পড়েই, আর আমি পত্রপাঠ চরিত্রের জায়গায় সেই লোকটির মুখ বসিয়ে ফেলি। মামামাসি কাকাপিসে, পাড়ার দোকানদার, রিকশাকাকু, নরেন্দ্র মোদী, দীপিকা পাড়ুকোন সকলেই আমার কল্পনায় বইয়ের চরিত্র হয়ে এসেছেন। 

৪। লেখকের চেহারাঃ এটা বেশিরভাগ ঘটে উত্তম পুরুষে লেখা গল্পের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে গল্পের প্রোটাগনিস্ট এবং লেখকের লিঙ্গ মিলে গেলে তো আর  কথাই নেই। গল্পটা হয়তো একটুও আত্মজীবনীমূলক নয়, কিন্তু গোটা লেখায় লেখকের ‘ভয়েস’ এত স্পষ্ট, যে আমি প্রধান চরিত্রে তাঁকে ছাড়া আর কাউকে কল্পনা করতে পারি না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখায় এ জিনিস আমার বারংবার ঘটেছে। 

চরিত্রের আমদানির সঙ্গে সঙ্গে তার একটা চেহারার বর্ণনা দেওয়ার নিয়মটা অনেক লেখকই নিষ্ঠাভরে মেনে চলেন। ব্যোমকেশের গল্পগুলোতে এর একটাও ব্যতিক্রম দেখেছি বলে আমার মনে পড়ছে না। তোপসেও বর্ণনা দেয়। কেন দেয় সে পোস্টের শুরুতেই বলে দেওয়া আছে। তাছাড়াও যে কোনও বাংলা গল্প হাতে তুলে নিয়ে দেখুন, আমার ধারণা চরিত্রের বাহ্যিক বর্ণনায় তা টইটম্বুর থাকবে। একটা লোক কত লম্বা (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে পাঁচ সাত থেকে পাঁচ নয়), কত মোটা (ধুমসো মোটা কিংবা খ্যাংরাকাঠি নয়, সাহিত্যিকদের ফেভারিট বডি টাইপ একহারা কিংবা দোহারা) গায়ের রং (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ), নাক থ্যাবড়া আর টিয়াপাখির মাঝামাঝি, ছাগলদাড়ি কিংবা ক্লিন শেভন। একটা চেহারা কি ফুটছে আপনার মাথার ভেতর? আমার ফুটছে না। 

বাইরের একগাদা বর্ণনার থেকে আমার পক্ষে বরং বেশি সুবিধেজনক হয় ভেতরের বর্ণনা পেলে। লোকটা কেমন, সাহসী না ভীতু, স্পষ্টবক্তা না মুখচোরা, আদর্শবাদী না দুনিয়াদার। তবে বেস্ট বর্ণনা হচ্ছে সেগুলো যেগুলো একই সঙ্গে একটা চরিত্রের ভেতরবার সবকিছু পাঠকের সামনে মেলে ধরে। এই রকম বর্ণনা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশ উপন্যাসে পড়েছিলাম মনে পড়ছে। একেবারে প্রথম দিকের দৃশ্য। পরিতোষ (নাম ভুল হতে পারে) বলে কেউ একজন (মোস্ট প্রব্যাবলি, বন্ধুর ভাই) এসে বক্তাকে সকালবেলা ডাকাডাকি করছে। বক্তা বলছেন পরিতোষকে দেখতে ইকনমিক্সের ভালো ছাত্রের মতো। পরিতোষের নাক কত লম্বা, গায়ের রং-এর শেড, গোঁফ আছে না ছাগলদাড়ি, শার্ট ফুলহাতা না হাফহাতা, কিছুই জানা হল না, কিন্তু প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে বা রাস্তায় মারামারি বাধলে পরিতোষের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া আপনি একেবারে ছবির মতো দেখতে পেলেন। 

পোশাকের বর্ণনা কি চেহারার বর্ণনার থেকে বেশি উপযোগী? কখনও কখনও। স্টিভ জবসের বর্ণনা দিতে গিয়ে তাঁর নাকের দৈর্ঘ্যের থেকে তাঁর একরঙা ইউনিফর্মের বর্ণনা দেওয়া বেশি কাজের বলেই আমার ধারণা। তাতে তাঁর স্বভাব/দর্শনের একটা আঁচ মেলে। কিন্তু যে চরিত্রের জীবনে পোশাকের কোনও গুরুত্ব নেই, যখন যা হাতের কাছে পায়/শখ হয়, সেটা পরাই যদি তার দস্তুর হয় তবে কোনও দৃশ্যে সে স্কার্ট পরেছে না লেহেঙ্গা, সেটার প্যাটার্ন বিমূর্ত না আদিবাসী শিল্পের, সে সব দিয়ে কোন কর্মটা হয় আমার মাথায় ঢোকে না। অথচ জামাকাপড়ের বর্ণনাতেও অধিকাংশ লেখা ছয়লাপ।

এত কথা ভেবে ফেলার পর যে কথাটা মাথায় এল, সেটা গোড়াতেই এলে আমি এত কথা ভাবতাম না। না ভাবলে অবশ্য পোস্টটাও লেখা হত না। কাজেই একদিক থেকে কথাটা লেটে মাথায় এসে ভালোই হয়েছে। কথাটা হচ্ছে যে চরিত্রের চেহারার বর্ণনা আমাকে প্রভাবিত করে না বলে যে আর কাউকে করবে না তেমন তো নয়। সার্ভে করার মতো যে ছিল হাতের কাছে তারই দ্বারস্থ হলাম। তাতে কিছু সুবিধে হল না যদিও। সেও এক্স্যাক্টলি তাই বলল যা আমি এতক্ষণ আপনাদের বললাম।। "চেহারার বর্ণনা পড়ি, কিন্তু ফাইন্যালি সেই চেহারাটাই কল্পনা করি যেটা আমি কল্পনা করতে চাই। আর সেই কল্পনায় লেখকের হিন্টস খুব একটা ম্যাটার করে না।" 

কোনও মানে হয়? মত না মিললে আমি নিশ্চিত হয়ে যেতাম যে আমার মতটাই ঠিক, যেই মত মিলল অমনি কনফিডেন্সে টান পড়ে গেল। হয়তো আমরা দুজনেই ফাঁকিবাজ পাঠক, হয়তো বাকিরা পরিশ্রমী। আর মোটে একজনকে সার্ভে করে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো কি উচিত, বিশেষ করে সার্ভের পক্ষে ক্ষতিকারক যতরকম বায়াস থাকা সম্ভব, সবই যখন আমার তার প্রতি আছে?

অগত্যা আপনাদের জিজ্ঞাসা করছি।  কার নাক কত খাড়া, চোখ কত কুতকুতে, গায়ের রং গম না কালোজামের মতো, সে তাঁতের শাড়ি পরে না ধনেখালি, এগুলো জানলে কি চরিত্রের চেহারা আপনার মাথার মধ্যে তৈরি করতে সুবিধে হয়? যদি হয় তাহলে আমাকে জানান। যদি না হয়, তাহলেও জানান দয়া করে।


Comments

  1. এ ব্যাপারে আমার যাকে বলে একটু মিক্সড ফিলিংস আছে.

    অনেক সময়েই, গল্পে মানুষের বর্ণনা পড়ার সময়ে সে বর্ণনা আমার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়, আর আমি মানুষটাকে সেরকমই কল্পনা করি যেরকম করতে চাই। গল্পের ইলাস্ট্রেশন, টিভি, সিনেমা দেখে থাকলে সেটা সাহায্যও করতে পারে, আবার কল্পনার পথে বাধার সৃষ্টিও করতে পারে। আমি যেমন কার্সড চাইল্ড পড়ার সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক হ্যারিকে ভাবতেই পারছিলামনা, কারণ আমার মনে ড্যানিয়েল রেডক্লিফের চেহারাটা ভেসে উঠছিল। সেটা বাধার উদাহরণ। উল্টো দিকে হ্যাগ্রিড বা স্নেপের যে বর্ণনা বইতে আছে সেটা সিনেমায় হুবহু উঠে এসেছিল, তাই সেখানে বই পড়তে সুবিধে হয়। তাই বর্ণনার খুব একটা গুরুত্ব অনেক ক্ষেত্রেই থাকেনা। চরিত্রের ছবি আঁকা থাকলে তো নয়ই। বরং বর্ণনা না থাকলে কিছুটা কল্পনার সাহায্য নেওয়া যায় যার ফলে আমাদের চেনা চরিত্রদের সঙ্গে মিল খুঁজে নিয়ে দেখতে সুবিধে হয়। আপনি যাকে নরেন্দ্র মোদী ভাবছেন তাঁর যদি দাড়ি পরিষ্কার করে কামানো থাকে তাহলে কি আর তাকে মোদী ভাবা চলে? দাড়ির ব্যাপারটা উহ্য থাকলে চলে।

    কিন্তু ইদানিং একটা ক্ষেত্রে আমি বর্ণনা পছন্দ করি। সেটা হল নতুন যুগের বিদেশী গল্পে, যেখানে বিভিন্ন দেশের, জাতির বা ধর্মের লোক থাকে, সেখানে একটা বর্ণনা না দিলে কল্পনাটা লেখকের কল্পনার থেকে একটু বেশিই আলাদা হয়ে পড়তে পারে। বিশেষতঃ যদি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয় তাহলে তো কথাই নেই। তাছাড়া স্পষ্ট বর্ণনা থাকলে পরে সিনেমা করার সময়ে অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছতে সুবিধা হয়। তাই যেখানে কল্পনার বিস্তারটা একটু বেশি, সেখানে অল্প বর্ণনা দিয়ে কল্পনাকে একটু বেঁধে দিলে ভালোই লাগে।

    বাই দা ওয়ে, আমায় হয়তো রেসিস্ট বলবেন, কিন্তু আমি হারমাইওনি গ্র্যাঞ্জারকে কোনওদিন সাদা চামড়ার মেমসাহেব ছাড়া কিছু ভাবিনি। এখন লন্ডনে কার্সড চাইল্ডের নাটকে এক ব্ল্যাক অভিনেত্রী চরিত্রটা করছেন। আমি নাটকটা দেখিনি, কিন্তু মেনে নিতে অসুবিধে হয়। হয়তো সিনেমায় প্রথম থেকে ব্ল্যাক মেয়ে থাকলে হতোনা, কারণ নাটকের পরিচালক বলেছেন হারমাইওনির গায়ের রং নাকি কোথাও লেখা নেই। আমি অবশ্য ওই অভিনেত্রীকে বাছার ব্যাপারটা ভালো না খারাপ সে বিষয়ে বলতে পারবনা, আমার কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের একটা ঝামেলা বাধে সেটাই বললাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, সুগত। প্রথমাংশের সঙ্গে একেবারেই একমত। বেশিরভাগ বর্ণনা আমারও মাথার ওপর দিয়েই যায়।

      দ্বিতীয় অংশের সঙ্গেও একমত, যে জাতি, ধর্ম, বর্ণের লোক থাকলে তার বর্ণনা দেওয়া উচিত। এ সব বর্ণনা না দিয়ে পার পাওয়ার জায়গায় আমরা নেই। আমাদের মগজ এমন ধোলাই হয়ে গেছে যে সাদা চামড়ার লেখক যে সাদা চামড়া ছাড়া আর কারও গল্প লিখতে পারেন, বা তার থেকেও বড় কথা, যে বাড়ির ছেলেমেয়েরা সাধারণ স্কুলে না গিয়ে প্রাসাদোপম ম্যাজিকের স্কুলে যাওয়ার ক্ষমতা/সাহস রাখে, তারা যে কোনওমতেই কালো হতে পারে, সে কথা আমাদের মাথাতেই আসে না। ডাম্বলডোর যে সমকামী হতে পারেন, এ সম্ভাবনা আমার মাথাতেই আসেনি, যদিও আমি শেষেরদিকের বইগুলো রীতিমতো বুড়ো বয়সে পড়েছি। কাজেই বইতে বৈচিত্র্য রাখা এবং চোখে আঙুল দিয়ে সে বৈচিত্র্য পয়েন্ট আউট করে দেওয়ার ভয়ানক আশু দরকার। যতদিন না ব্যাপারটা চোখে সয়ে আসে এবং মনে গেঁথে যায়। এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।

      Delete
    2. J.K. Rowling amar onyotomo priyo lekhika, kintu uni boddo "politically correct in retrospect" howay bishwasi. Maney, ei je Dumbledore somokaami, ba Hermione krishnangi holeo hotey paren...egulo jodi uni kholakhuli boi te ullekh korten, tahole golpo guli onyo matra peto bolei amar dharona. Dhoro jodi sobai janto Hermioner gaayer rong ki, tahole "Chamber of Secrets" er jei drishye Draco Hermione ke "Mudblood" bole opomaan korchhe, tatey ki aro ekta porot, aro ektu itihaas jog hoto na?

      "Cursed Child" amar khub kharap legechhe. Kintu sekhaneo Albus ebong Scorpius je somokaami, eta proti drishye futey beriyechhe. Rowling kintu ekbaro kholakhuli bolen ni kichhu. Amar drirho dharona kichhu bochhor pore hothat uni likhben je asole prothom thekei uni Albus ke somokaami bhebechhilen...amra murkho pathok, emon mogojdholai hoyeche amader je amra kichu bujhtei parini.

      Marginalized group er protinidhitwo jodi kortei hoy, tahole segulo "canonize" korar dorkar. Erom dhori machh na chhui paani achoroney akhere kono labh-i hoy na.

      Delete
    3. একমত, বিম্ববতী। কিন্তু আবার এই মহিলাই তো ক্যাজুয়াল ভেকেন্সি লিখেছেন, এবং সেটা তো বেশ রাখঢাক না করেই লিখেছেন।

      Delete
  2. এরক্যুল পোয়ারো = ডেভিড সুশে

    ব্যোমকেশ বক্সী = রজিত কাপুর

    মিলেছে - উচ্চ দশ।

    শার্লক হোমস??

    আমার কাছে তিনি শুধুই জেরেমি ব্রেট - আমি কিছুতেই এই নব শার্লকরূপী বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ কে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি। :(

    ও হ্যাঁ - আমি চূড়ান্ত অমনোযোগী পাঠক। তিনটে ড্যান ব্রাউন পড়ার পরে বুঝতে পেরেছিলুম - সবচেয়ে কাছের লোক-ই হবে খলনায়ক। চারবারের বার আর তাই কোন সংশয় ছিল না - আর প্যাটার্ণ মিলে যাবার পরে আমিও ওনার বই পড়া ছেড়ে দিয়েছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. উচ্চ দশ, শুভায়ন। শার্লক হোমস আমারও এতদিন জেরেমি ব্রেটই ছিলেন, কাম্বারব্যাচ তো কদাপি না, ইন ফ্যাক্ট এই সুযোগে আরেকটা রাগও উগরে দিই, শার্লক সিরিয়ালটা আপনার কেমন লাগত? আমি সিরিয়াসলি বসে দেখতে পারিনি। ওর থেকে এলিমেন্টারি ঢের ভালো। যাই হোক, জেরেমি ব্রেট ভালো, কিন্তু কয়েকটা এপিসোডে, বিশেষ করে শেষের দিকে, হাত পা নাড়াকে প্রায় নাচের জায়গায় নিয়ে গেছেন। ইদানীং পর পর কয়েকটা বাসিল র‍্যাথবোনের শার্লক হোমস দেখলাম, চেহারার দিক থেকে তিনি ব্রেটের তুলনায় শার্লকের বেশি কাছাকাছি বলে আমার মনে হয়েছে। তাছাড়া ড্রামার বাড়াবাড়িটাও মিসিং।

      ড্যান ব্রাউন ফর্মুলা ব্যাপারটাকে একটা নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে একমত।

      Delete
    2. আমি নতুন শার্লকের ব্যাপারে বেশ অসহিষ্ণু। যেহেতু হোমস কে ভালো লাগেনি তাই আমি একটা পর্বও দেখার চেষ্টা করিনি। এরকমটি করা যদিও নতুন বিদ্বেষের সামিল - তবুও আমি সেকেলে-ই রয়ে গেলুম। আসে পাশের অনেকেই বলেছেন যদিও - নতুন শার্লক বেশ সমসাময়িক, পিরিয়ড পিস ড্রামা নহে। শার্লকের যেরকম লন্ডন জুড়ে কাগজ-কুড়ানি দের কাজে লাগাতেন তেমন ইনিও বোল্ডলি ব্ল্যাকবেরি কাজে লাগিয়ে রহস্য সমাধান করেন। তবুও ... নতুন শার্লক আমার কাছে এক ইঁচড়ে অকাল পক্ক নভিস ছাড়া আর কিছুই না।। তাকে আমি হোমসের ভূমিকায় দেখতে নারাজ।

      বাসিল র‍্যাথবোন - নামটা নতুন, সার্চ করতে গেলুম। পছন্দ হয়ে গেলে ( বা না হলেও) জানাব। পোয়ারো যেরকম ডেভিড সুশে ছাড়াও পীটার উস্তিনভের আর অ্যালবার্ট ফিনির দেখেছি (যদিও ভালো সেরকম লাগেনি)। হোমসের ভিন্ন স্বাদ নেওয়া হয়ে ওঠেনি সেরকম।

      Delete
    3. ওরে বাবা, পোয়্যারোর ভূমিকায় উস্তিনভ জাস্ট অসহ্য। মানে আমার লেগেছে আরকি। উস্তিনভ, ফিনি, সকলেরই বিপদটা হচ্ছে, সুশে এতই ভালো এবং নিখুঁত যে ওঁরা কমপিটিশনের চান্সই পাননি।

      Delete
  3. এরক্যুল পোয়ারো = ডেভিড সুশে

    ব্যোমকেশ বক্সী = রজিত কাপুর


    mile gechhey. tobe ami sudhu lokjon na, jayga gulo o kolpona korte thaki lekha porte porte.. dipika padukone, ulto diker neighbor theke pasher parar chayer dokan, chhotobelay berate jaoya ranchi, sobai chole ase golper patropatri ar location tairi korte.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এ তো খুব ভালো পাঠকের লক্ষণ, চুপকথা।

      Delete
  4. karo bornona beshi hole ami mone mone skip kore jai se , ami amonojodi pathok swikar korchhi . ar amar nijer moto kore ami jayga, choritro soboi vebe nii tai amar vombol sardarer cinemay oi bacchatake vombol sardar hisebe pochondo hoyni ekdom . - PB

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভোম্বল সর্দারের সিনেমা হয়েছে বুঝি, প্রদীপ্ত? আর বর্ণনার পার্ট আমিও স্রেফ চোখই বোলাই, আমিও মনোযোগী পাঠক নই।

      Delete
    2. hain onek purono print , you tube e peye jabe -PB

      Delete
    3. আচ্ছা। থ্যাংক ইউ।

      Delete

Post a Comment